ভূমিকা
বর্তমান বিশ্বে রাজনৈতিক সচেতনতা শুধু ভোটের দিন সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া যা সমাজকে পরিবর্তন করতে পারে। তরুণরা হলো যে কোনো জাতির ভবিষ্যৎ, এবং তাদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ দেশ ও সমাজের গুণগত পরিবর্তন আনতে পারে। বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে তরুণদের রাজনৈতিক সচেতনতা কীভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ, এবং কীভাবে এটি আরও কার্যকর করা যেতে পারে—তা নিয়ে এই আলোচনাটি হবে।
কেন তরুণদের রাজনৈতিক সচেতনতা জরুরি?
১. ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গঠনে ভূমিকা: তরুণরা আজকের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয় হলে ভবিষ্যতে তারা দক্ষ নেতা হয়ে উঠতে পারে। ২. সামাজিক পরিবর্তনের চালিকা শক্তি: ইতিহাস সাক্ষী, তরুণরাই বড় রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান শক্তি। ৩. জবাবদিহিতার সংস্কৃতি তৈরি: তরুণরা যদি সচেতন হয়, তবে তারা সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে যাতে তারা স্বচ্ছ ও ন্যায়সংগতভাবে কাজ করে। ৪. ভোট ও গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা: সঠিক রাজনৈতিক জ্ঞান থাকলে তরুণরা যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচিত করতে পারে, যা গণতন্ত্রকে আরও কার্যকর করে।
তরুণদের রাজনৈতিক সচেতনতার বর্তমান চিত্র
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার বিস্তারের ফলে তরুণদের মধ্যে রাজনৈতিক আলোচনা ও আগ্রহ বেড়েছে। ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয়ে অবগত হচ্ছে এবং মত প্রকাশ করছে। কিন্তু এই সচেতনতা সবসময় বাস্তব রাজনৈতিক অংশগ্রহণে রূপান্তরিত হয় না। অনেক তরুণ রাজনৈতিক বিষয়ে উৎসাহী হলেও তারা সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হতে দ্বিধা করে।
তরুণদের রাজনীতিতে কম অংশগ্রহণের কারণ
১. নেতিবাচক রাজনীতি ও দুর্নীতি: অনেক তরুণ রাজনীতিকে দুর্নীতি ও হিংস্রতার সঙ্গে যুক্ত মনে করে, যা তাদের অংশগ্রহণ নিরুৎসাহিত করে। ২. পর্যাপ্ত শিক্ষা ও দিকনির্দেশনার অভাব: রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপযুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা থাকা জরুরি। ৩. পরিবর্তনের প্রতি হতাশা: অনেক তরুণ মনে করে, তাদের অংশগ্রহণ কোনো বড় পরিবর্তন আনতে পারবে না। ৪. পরিবার ও সমাজের বাধা: অনেক পরিবার মনে করে রাজনীতি তরুণদের জন্য নিরাপদ নয়, ফলে তারা সন্তানদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখে।
কীভাবে তরুণদের রাজনৈতিক সচেতনতা ও অংশগ্রহণ বাড়ানো যেতে পারে?
১. শিক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা: স্কুল-কলেজে রাজনৈতিক ও নাগরিক সচেতনতা বিষয়ক কোর্স অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। ২. ইউথ পার্লামেন্ট ও কর্মশালা আয়োজন: তরুণদের জন্য রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ ও আলোচনা সভার ব্যবস্থা করা উচিত। ৩. সোশ্যাল মিডিয়ার ইতিবাচক ব্যবহার: সোশ্যাল মিডিয়ায় সঠিক তথ্য প্রচার করে তরুণদের মধ্যে সঠিক রাজনৈতিক জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন। ৪. স্থানীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ: বড় রাজনীতির চেয়ে স্থানীয় পর্যায়ে ছোটখাট উদ্যোগের মাধ্যমে তরুণরা নিজেদের ভূমিকা রাখতে পারে। ৫. স্বচ্ছ ও নৈতিক রাজনীতি উৎসাহিত করা: রাজনৈতিক দলগুলো যদি তরুণদের জন্য একটি স্বচ্ছ ও ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করে, তাহলে তাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাবে।
উপসংহার
তরুণদের রাজনৈতিক সচেতনতা শুধুমাত্র তাদের নিজস্ব ভবিষ্যতের জন্য নয়, বরং সমগ্র জাতির উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তারা যদি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে, তাহলে দেশকে দুর্নীতি, বৈষম্য ও অন্যায় থেকে মুক্ত করা সম্ভব হবে। তরুণদের শক্তি এবং সদিচ্ছাই আগামী দিনের পরিবর্তনের নতুন আশা।