ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সাম্প্রতিক এক মন্তব্য নিয়ে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে নতুন বিতর্ক। ইউক্রেন ও গাজার যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা দেশগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা হারাতে পারে— এমন সতর্কবার্তা দিয়ে তিনি বলেন, “পশ্চিমের প্রতি আস্থার সঙ্কট তৈরি হতে পারে যদি আমরা এখনই অবস্থান স্পষ্ট না করি।”
কিন্তু ম্যাক্রোঁর এই বক্তব্যকে ব্যঙ্গাত্মকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড।
গত শনিবার (৩১ মে) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ দেওয়া এক টুইটে তিনি বলেন,
“পশ্চিমারা ১৯ মাস আগেই তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে।”
তিনি সরাসরি ম্যাক্রোঁর বক্তব্য উদ্ধৃত করে প্রশ্ন তোলেন— “সত্যিই কি এখন হারাতে পারে? গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যায় পশ্চিমারা যে ভূমিকায় ছিল, অথবা নীরবতা পালন করেছে—তাতে তারা বহু আগেই তাদের নৈতিক অবস্থান হারিয়েছে।”
গাজায় চলমান সহিংসতা ও পশ্চিমাদের ভূমিকা
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর পরিচালিত সামরিক অভিযানে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। লক্ষ্যহীন বোমাবর্ষণ, অবরোধ, খাদ্য ও ওষুধ সংকট, হাসপাতাল ধ্বংস—এই সবকিছুর মধ্যেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে পশ্চিমা শক্তিগুলো, কার্যত নীরব থেকেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো যতটা সরব এবং সমর্থনমূলক ছিল, গাজা ইস্যুতে ঠিক ততটাই নিস্পৃহ ও দ্বিমুখী মনোভাব প্রদর্শন করেছে।
অ্যাগনেস ক্যালামার্ডের মন্তব্যের তাৎপর্য
অ্যাগনেস ক্যালামার্ডের ভাষ্য অনুযায়ী, বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরে পাওয়ার জন্য এখন কেবল বিবৃতি দেওয়া যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন হচ্ছে—
ন্যায়সঙ্গত অবস্থান গ্রহণ,
মানবাধিকারের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রদর্শন,
এবং জবাবদিহিতার আওতায় অপরাধীদের আনা।
তিনি বলেন, “এই বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধারে শব্দের চেয়ে অনেক বেশি কিছুর প্রয়োজন—কাজ, সাহস এবং ন্যায়বিচার।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এ বক্তব্য বিশ্বব্যাপী অনেক মানবাধিকারকর্মী ও বিশ্লেষকের প্রতিধ্বনি হিসেবেই ধরা হচ্ছে। তারা মনে করছেন, বিশ্ব এখন এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে যেখানে ‘কে অপরাধী, কে ভিকটিম’—এই প্রশ্নের জবাব অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক সুবিধা অনুযায়ী নির্ধারিত হচ্ছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের বিপরীতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রধানের কড়া প্রতিক্রিয়া শুধু রাজনৈতিক বার্তা নয়, এটি একটি নৈতিক প্রশ্নও। যুদ্ধের মুখে দাঁড়িয়ে আজ মানবতা, ন্যায়বিচার এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বাসযোগ্যতার যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা শুধুই বক্তব্যে মিটবে না—দরকার সাহসী পদক্ষেপ ও নৈতিক নেতৃত্ব।