একটা সময় ছিল, যখন এই প্রবাদটি কেবলমাত্র গ্রামের মোড়, পাঠশালা কিংবা প্রাচীন সাহিত্যেই শোনা যেত। কিন্তু এখনকার দিনে, প্রযুক্তি, নগরায়ন আর প্রতিযোগিতার এই যুগেও—এই বাক্যটি আগের চেয়েও বেশি প্রাসঙ্গিক।
যুগ বদলেছে, কিন্তু প্রবাদটির মূল্য আরও বেড়েছে
এখন আমরা ডিজিটাল যুগে বাস করছি। সবাই ব্যস্ত, সবাই নিজের মতো করে সাফল্যের পেছনে ছুটছে। অথচ বড় কোনো সমস্যার সমাধানে, কিংবা সৃষ্টিশীল কোনো কাজে এখনও প্রয়োজন হয় দলগত উদ্যোগ, পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সম্মিলিত জবাবদিহিতা।
একটা স্টার্টআপ কোম্পানি, একটা ওয়ার রুম, একটা বন্যা-উদ্ধার টিম—সব ক্ষেত্রেই একসাথে কাজ করার গুরুত্বই প্রমাণ করে এই প্রবাদ।
ব্যতিক্রম দৃষ্টিভঙ্গি: একতার মানে শুধু ভিড় নয়, দিশাও দরকার
অনেকে মনে করেন, ‘দশে মিলে’ মানেই বেশি মানুষ হলেই হবে। কিন্তু বাস্তবে, একসাথে কাজ করতে হলে দরকার—
একটা স্পষ্ট উদ্দেশ্য
ভূমিকা নির্ধারণ
পারস্পরিক সম্মান
যোগাযোগের স্বচ্ছতা
কারণ দিকহীন একতা, যেমন ভিড় — কাজের নয়। আবার একনায়কত্বও কাজের নয়। তাই একতার সঙ্গে চাই বুদ্ধিমত্তা ও দায়িত্বশীলতা।
শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে প্রয়োগ
শিক্ষার্থীদের দলভিত্তিক প্রকল্প, গ্রুপ ডিসকাশন বা ক্লাসের বাইরে একসাথে কমিউনিটি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ—এই প্রবাদটিকে বাস্তবে পরিণত করে। এতে করে শেখা হয়:
নেতৃত্ব ও অনুসরণ উভয়ই
মতভেদ থাকা সত্ত্বেও সম্মিলিত কাজ কীভাবে সফল করা যায়
ব্যক্তি-সাফল্যের বাইরে দলীয় অর্জন কেমন হয়
সামাজিক ও জাতীয় স্তরে বার্তা
শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে যদি দশজন মিলে হাতে ঝাঁটা তুলে নেয়, তাহলে শহর পরিষ্কার রাখতে সরকারের এত চাপ হতো না।
গ্রামে রাস্তা তৈরি, কিংবা বন্যা প্রতিরোধ — দশজনের হাত ধরলেই কাজ সহজ হয়।
জাতীয় রাজনীতিতে যদি দলগুলোর মধ্যে পরস্পর সহযোগিতা থাকত, তাহলে সংকটের বদলে সমাধান আসত আগেই।
উপসংহার: একতা মানে শুধু সংখ্যার জোর নয়, চেতনার সংহতি
“দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ” — এক অসাধারণ সামাজিক দর্শন। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, একসাথে কাজ করলে জয় আসবেই, আর যদি জয় না-ও আসে, হারটাও হয় সম্মানজনক ও গৌরবের। কারণ একতার ভিত শক্ত হলে—পরাজয়ও নতুন জয়ের দিকে চালিত করে।
স্মরণ রাখা উচিত:
“আমি” নয়, “আমরা”—এই শব্দটাই বদলে দিতে পারে ভবিষ্যৎ।