টোকিও, ৩০ মে ২০২৫
আজ বিকেলে জাপানের প্রখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সোকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ দিতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ভাষণ শুধু একটি আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি নয়—এটি হতে চলেছে এক অনন্য বার্তা, যেখানে বাংলাদেশের উন্নয়ন দর্শন, মানবিকতা ও শান্তির ধ্বনি বিশ্বমঞ্চে প্রতিধ্বনিত হবে।
সম্মান ও গৌরবের মুহূর্ত
সোকা বিশ্ববিদ্যালয় ড. ইউনূসকে প্রদান করবে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি, যা কেবল তাঁর ব্যক্তিগত অবদানের স্বীকৃতি নয়, বরং বাংলাদেশের ভাবমূর্তির ওপর একটি আন্তর্জাতিক সীলমোহর। ‘সামাজিক ব্যবসা’, দারিদ্র্য বিমোচন, এবং মানবিক অর্থনীতির ধারণা ছড়িয়ে দিয়ে যিনি বিশ্বজুড়ে কোটি মানুষের প্রেরণায় পরিণত হয়েছেন—তাঁকে সম্মান জানাতে আজ মুখিয়ে আছে জাপানের শিক্ষার্থী ও বুদ্ধিজীবী সমাজ।
রাজনৈতিক কূটনীতি ও বন্ধুত্বের বার্তা
ড. ইউনূস বর্তমানে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে জাপানে অবস্থান করছেন। সফরের অন্যতম অর্জন হলো জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার-এর সঙ্গে তাঁর উচ্চ পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক, যেখানে বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে জাপান ১০৬ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলারের সহায়তা ঘোষণা করেছে। এই অর্থ সহায়তা বাংলাদেশের অবকাঠামো, প্রযুক্তি ও মানবসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এখানে কেবল অর্থনৈতিক চুক্তি নয়, দুই দেশের গভীর বন্ধুত্ব, আস্থা ও ভবিষ্যৎ সহযোগিতার রূপরেখা স্পষ্ট হয়েছে।
ভাষণের মূল বার্তা: শান্তি, নৈতিকতা ও বৈশ্বিক দায়িত্ব
ড. ইউনূসের আজকের ভাষণ কেবলমাত্র অর্থনীতি বা উন্নয়ন নিয়ে নয়—তিনি বলবেন এক নৈতিক দায়িত্বের কথা, যেখানে সমাজ ব্যবসার মাধ্যমে ধনী-গরিবের ব্যবধান ঘোচানো সম্ভব, যেখানে মানুষ মানুষকে বোঝে ধর্ম, জাতি, গণ্ডি ছাড়িয়ে।
তিনি তুলে ধরবেন বাংলাদেশের মানবিক অর্জন, যেমন রোহিঙ্গা শরনার্থীদের আশ্রয় দিয়ে জাতি হিসেবে যে সহিষ্ণুতা আমরা দেখিয়েছি, তার গুরুত্ব।
সফরের পরিসমাপ্তি
সফর শেষে ড. ইউনূস আগামীকাল ৩১ মে দেশে ফিরবেন। তবে তাঁর এই সফর ও ভাষণ আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের জন্য রেখে যাবে এক উদার, মানবিক ও প্রগতিশীল রাষ্ট্রের ছাপ।
উপসংহার: বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের গর্ব
আজকের এই সম্মাননা, এই ভাষণ—বাংলাদেশের জন্য গর্বের, আত্মবিশ্বাসের এবং ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনার প্রতীক। ড. ইউনূস শুধু একজন নোবেল বিজয়ী নন—তিনি এক প্রতীক, যিনি বারবার প্রমাণ করেছেন যে, নেতৃত্ব মানে কেবল শাসন নয়, বরং আলোকবর্তিকা হয়ে পথ দেখানো।
বাংলাদেশ আজ তাঁর হাত ধরে আবারও মাথা উঁচু করে দাঁড়াল বিশ্বসভায়—শান্তি, প্রজ্ঞা ও মানবিকতার কণ্ঠস্বর হয়ে।