২৬ মে ২০২৫, ঢাকা:
বাংলাদেশের ইতিহাসে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অন্যতম আলোচিত ব্যক্তি, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ খালাস পেয়েছেন। এর ফলে দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় ধরে চলা বিচারিক প্রক্রিয়ার ইতি ঘটল। আদালতের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন জামায়াতের নেতা-কর্মীরা এবং আদালত চত্বরে তারা শোকরানা নামাজ আদায় করেন—যা জাতীয় ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
রায়ের সংক্ষিপ্ত পটভূমি
২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এটিএম আজহারকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিল। অভিযোগ ছিল, তিনি রংপুর অঞ্চলে গণহত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ ও নির্যাতনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করেন এবং পরবর্তীতে রিভিউ আবেদনের শুনানির পর ২০২৫ সালের ২৬ মে, আপিল বিভাগ তাঁকে সকল অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়।
জামায়াতের প্রতিক্রিয়া: শোকরানা নামাজ ও ‘ন্যায়বিচার’
রায়ের পরপরই জামায়াত কর্মীরা আদালত চত্বরে শোকরানা নামাজ আদায় করেন, যা বাংলাদেশে বিরল দৃশ্য। জামায়াতের আইনজীবী শিশির মনির বলেন,
“এই রায় প্রমাণ করে যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাজানো মামলায় একজন নির্দোষ মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। আজ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”
এমন প্রতিক্রিয়া জামায়াতের পক্ষ থেকে বিজয়ের ঘোষণা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, তবে বিষয়টি জাতিগত ও রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর।
আইন ও বিচার বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি
মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো গুরুতর অভিযোগে দীর্ঘ বিচার শেষে খালাস পাওয়া এই প্রথম কোনো ঘটনা নয়, তবে এটিএম আজহারের রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো। বিশ্লেষকরা বলছেন,
একদিকে এটি বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা এবং ন্যায়বিচারের প্রতিষ্ঠার নিদর্শন হতে পারে,
অন্যদিকে এটি যুদ্ধাপরাধ মামলার বিশ্বাসযোগ্যতা ও আইনি কাঠামো নিয়ে নতুন করে ভাবার প্রয়োজনীয়তা সামনে আনলো।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ প্রভাব
সরকারি দল আওয়ামী লীগ এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, এই রায় জামায়াতের রাজনৈতিক পুনর্বাসনের পথে একধাপ এগিয়ে যেতে পারে।
বিরোধীদলগুলোর একটি অংশ মনে করছে, এই রায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও সংবিধান অনুসরণ করে দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে আরেক অংশ মনে করছে এটি রাজনৈতিক চাপ বা সমঝোতার ফল।
উপসংহার
এটিএম আজহারের খালাস বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এটি একদিকে একজন ব্যক্তির জন্য মুক্তির বার্তা, অন্যদিকে জাতির জন্য এটি একটি পরীক্ষার মুহূর্ত—ন্যায়বিচার ও ঐতিহাসিক সত্যের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করার।
এই রায় কতটা দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে।