প্রতিদিন খবরের হেডলাইন— “গাজায় বিমান হামলা”, “শিশু নিহত”, “হাসপাতাল ধ্বংস”, “সহস্রাধিক মানুষ আহত”— এগুলো এখন যেন আমাদের চোখে স্বাভাবিক। কিন্তু প্রশ্ন হলো, মানবতার এই চরম লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে বিশ্ব চুপ কেন? আর সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন আসে মুসলিম বিশ্বের নিরবতা নিয়ে।
ইসরায়েলের নির্মমতা আর আমেরিকার মদদ
ইসরায়েল আজ যা করছে, তা কোনো সীমিত সামরিক প্রতিক্রিয়া নয়— এটা পরিকল্পিত গণহত্যা। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, তারা ফিলিস্তিনিদের জমি দখল করে, ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়ে, স্কুল, হাসপাতাল ও মসজিদে বোমা ফেলে এক ভয়ঙ্কর দানবীয় রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এই হত্যাযজ্ঞের পেছনে শক্ত পৃষ্ঠপোষক হলো যুক্তরাষ্ট্র— যারা প্রতি বছর বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র দিয়ে যাচ্ছে।
“ইসরায়েলের নিরাপত্তা” নামে একপেশে সমর্থন দিয়ে তারা চোখ বন্ধ করে রেখেছে ফিলিস্তিনিদের রক্তঝরা বাস্তবতার দিকে। মুসলিম বিশ্বের নীরবতা|
মুসলিম বিশ্বের নীরবতা: কেবল বিবৃতি আর প্রার্থনায় সীমাবদ্ধ?
সবচেয়ে বেদনাদায়ক বিষয় হলো— মুসলিম দেশগুলো একের পর এক বিবৃতি দিচ্ছে, “গভীর উদ্বেগ”, “মর্মাহত”, “শান্তির আহ্বান”— কিন্তু বাস্তবে কোনো পদক্ষেপ নেই।
সৌদি আরব, আমিরাত, মিশর— যারা অর্থ, সামরিক ও কূটনৈতিক দিক থেকে শক্তিশালী, তারা যেন নিজেদের দায়িত্ব ভুলে মুসলিম বিশ্বের নীরবতা আছে। একদিকে ফিলিস্তিনে রক্তপাত চলছে, অন্যদিকে মুসলিম রাষ্ট্রগুলো আন্তর্জাতিক মঞ্চে নীরব দর্শক।
তাদের অনেকেই এখন ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন করছে— অর্থনীতির স্বার্থে, তেলের দামের জল্পনায় তারা যেন ধর্ম, ন্যায্যতা আর ইতিহাসকে ত্যাগ করেছে।
ফিলিস্তিনিরা একা কেন?
আজ ফিলিস্তিনিরা শুধু ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নয়, তারা লড়ছে বিশ্বরাজনীতির নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্ব এবং মুসলিম বিশ্বের বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধেও। তাদের হাতে নেই আধুনিক অস্ত্র, নেই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা— আছে শুধু এক চিলতে আশা, মুক্তির আকাঙ্ক্ষা, আর লড়ার অদম্য সাহস।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, এভাবে আর কতকাল?
একটি জাতি কি শুধুই ইতিহাসে বেঁচে থাকবে, বাস্তবে নিঃশেষ হয়ে যাবে?
শেষ কথা
ফিলিস্তিন আসলেই অসহায়, কারণ তারা শুধু ইসরায়েলের সঙ্গে লড়ছে না— তারা লড়ছে পুরো আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ভণ্ডামির বিরুদ্ধে।
এখনো সময় আছে। মুসলিম বিশ্ব যদি একত্র হয়, কথা বলার পাশাপাশি কাজ শুরু করে, তাহলে হয়তো ফিলিস্তিনের শিশুরা আবার হাসতে পারবে।
নইলে এই নিরবতা ইতিহাস একদিন ক্ষমা করবে না।