বাংলাদেশ সরকারের নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা সাধারণ মানুষের জীবনে যেমন কিছু সুযোগ সৃষ্টি করে, তেমনি তৈরি করতে পারে কিছু বাস্তব অসুবিধাও। এবারের বাজেটেও এমন কিছু দিক রয়েছে যা নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করতে পারে। চলুন বিশ্লেষণ করে দেখা যাক বাজেটে সাধারণ মানুষের জন্য কী কী চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।
মূল্যস্ফীতির চাপ ও পণ্যের দাম বৃদ্ধি
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, যেমন চাল, ডাল, তেল, চিনি, লবণসহ অনেক পণ্যে ভ্যাট বা শুল্ক বৃদ্ধির কারণে দাম বাড়তে পারে। আমদানি নির্ভর পণ্যে কর বাড়লে এর প্রভাব সরাসরি বাজারে পড়ে। এ ছাড়া জ্বালানি খাতে ভর্তুকি হ্রাস করলে পরিবহন খরচ বাড়বে, যার প্রভাব পড়বে সব ধরনের পণ্যে।
মধ্যবিত্তের ওপর বাড়তি করের বোঝা
অনেক সময় সরকার রাজস্ব বাড়ানোর লক্ষ্যে মোবাইল রিচার্জ, ইন্টারনেট, অনলাইন কেনাকাটা, ব্যাংকিং সেবা প্রভৃতি খাতে ভ্যাট বাড়ায়। এতে মধ্যবিত্তরা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হন, যেহেতু তাদের আয়ের পরিমাণ স্থির থাকলেও খরচ বেড়ে যায়।
স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বরাদ্দ সীমিত হলে
সরকারি হাসপাতালের ওষুধ, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি বা চিকিৎসক সংখ্যা না বাড়লে মানুষ প্রাইভেট চিকিৎসা নিতে বাধ্য হয়, যা অনেক ব্যয়সাপেক্ষ। একইভাবে, শিক্ষা খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকলে স্কুল-কলেজে মানসম্মত পাঠদান নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। এভাবে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারে চাপ বাড়ে।
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ঘাটতি
বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বিধবা ভাতা, বিনামূল্যে খাদ্য সহায়তা প্রভৃতি সুবিধা এখনো অনেক দরিদ্র নাগরিকের জীবনরক্ষাকারী। বাজেটে যদি এসব কর্মসূচির পরিমাণ না বাড়ানো হয় বা বরাদ্দ কমে, তবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
জ্বালানি ও পরিবহন খাতে অসুবিধা
তেলের দাম বাড়লে শুধু গাড়ি চালানোই নয়, কৃষিজ পণ্য উৎপাদন ও পরিবহন ব্যয়ও বেড়ে যায়। এটি একটি “চেইন রিঅ্যাকশন” তৈরি করে, যেখানে সব ধরনের খরচ বাড়ে—বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি হয়।
সার্বিকভাবে কী দাঁড়ায়?
যদি বাজেট মূলত রাজস্ব আদায়ের ওপর কেন্দ্রভিত্তিক হয় এবং কর কাঠামো ধনীদের তুলনায় সাধারণ মানুষের ওপর বেশি বোঝা চাপায়, তবে তা একধরনের আয় বৈষম্য সৃষ্টি করে। এতে অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, বাড়ে সামাজিক অস্থিরতা।
কী করতে পারে সরকার?
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে ভ্যাট ও শুল্ক কমানো
স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানো
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীকে আরও সম্প্রসারণ
ধনী ও বড় কর্পোরেট গোষ্ঠীর ওপর কর নীতি আরও শক্তিশালী করা
উপসংহার
বাজেট একটি দেশের অর্থনৈতিক নীতি বাস্তবায়নের পথনির্দেশক। তবে এটি হতে হবে মানবিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক, যাতে সমাজের সব শ্রেণির মানুষ এতে উপকৃত হয়। নয়তো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সংখ্যাগুলো হয়তো বাড়বে, কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনমান থেকে যাবে আগের জায়গায়।