ভূমিকা
বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর অন্যতম গুরুতর সমস্যা হলো বেকারত্ব। দিনকে দিন শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়লেও কর্মসংস্থানের সুযোগ সেই অনুপাতে বাড়ছে না। ফলে সমাজে তৈরি হচ্ছে হতাশা, অপরাধপ্রবণতা, এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেকারত্ব একটি জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বেকারত্বের প্রকারভেদ
বেকারত্ব বিভিন্নভাবে শ্রেণিবিন্যাস করা যায়, যেমন:
খোলাখুলি বেকারত্ব (Open Unemployment): পুরোপুরি কর্মহীন ব্যক্তিরা।
আংশিক বেকারত্ব (Underemployment): দক্ষতা ও শিক্ষার তুলনায় অপ্রতুল কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিরা।
গোপন বেকারত্ব (Disguised Unemployment): যেখানে অনেক মানুষ একটি কাজ করছে, যা আসলে অল্পসংখ্যক লোক দিয়েই করা যেত।
মৌসুমি বেকারত্ব: নির্দিষ্ট ঋতুতে কাজ না থাকায় বেকার হয়ে পড়া, যেমন কৃষিখাতে।
বেকারত্বের কারণ
শিল্পায়নের ঘাটতি: পর্যাপ্ত শিল্প-কারখানা না থাকায় কর্মসংস্থান কম।
শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা: দক্ষতা ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির দিকে শিক্ষা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত গুরুত্ব দেয় না।
প্রযুক্তির প্রভাব: অটোমেশন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার মানুষের কাজের জায়গা দখল করছে।
জনসংখ্যা বিস্ফোরণ: চাকরির তুলনায় কর্মপ্রত্যাশীর সংখ্যা অনেক বেশি।
উদ্যোক্তা সংস্কৃতির অভাব: উদ্যোক্তা হওয়ার ঝুঁকি নিতে আগ্রহ কম।
এর সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব
অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি: কর্মহীন যুব সমাজ সহজেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়তে পারে।
অভিবাসন বৃদ্ধি: কর্মসংস্থানের অভাবে অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন।
পারিবারিক অস্থিরতা: অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা পারিবারিক জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলে।
দারিদ্র্যের বিস্তার: আয় না থাকায় মানুষ দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রে পড়ে।
সমাধানের পথ
কারিগরি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ: কর্মমুখী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা।
উদ্যোক্তা ও স্টার্টআপ সহায়তা: ক্ষুদ্রঋণ, কর ছাড় ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুবকদের উদ্যোগ গ্রহণে উৎসাহিত করা।
ডিজিটাল ইকোনমির সদ্ব্যবহার: ফ্রিল্যান্সিং, রিমোট কাজ, ই-কমার্সের সুযোগ সৃষ্টি।
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব: বেসরকারি খাতকে আরও সক্রিয় করে তোলা।
শিল্পায়ন প্রসার: নতুন শিল্প অঞ্চল গড়ে তোলা এবং গ্রামে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের উন্নয়ন।
উপসংহার
বেকারত্ব শুধু ব্যক্তিগত সমস্যা নয়, বরং এটি একটি জাতীয় সংকট। এর দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ, সময়োপযোগী নীতিমালা এবং যুব সমাজের আত্মবিশ্বাস ও দক্ষতা বৃদ্ধি। যদি সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তবে এই জনশক্তিই ভবিষ্যতের সবচেয়ে বড় সম্পদে পরিণত হতে পারে।