বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়াতে যাচ্ছে ৩.৯৭ শতাংশে। অথচ আগের অর্থবছরে এই হার ছিল ৪.২২ শতাংশ। যদিও সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি কমেছে, তবে আশার আলো হিসেবে মাথাপিছু আয় বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।
📉 জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে মন্দা, কারণ কী?
বিবিএস বলছে, দেশের তিনটি প্রধান খাত—কৃষি, শিল্প এবং সেবা—এর মধ্যে কৃষি ও সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে, যা সামগ্রিক অর্থনীতিকে মন্থর করে দিয়েছে। কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ১.৭৯ শতাংশে (গত অর্থবছরে ছিল ৩.৩০%) এবং সেবা খাতে ৪.৫১ শতাংশ (গত বছর ছিল ৫.০৯%)। বিপরীতে, শিল্প খাতে কিছুটা উন্নতি হয়েছে; চলতি অর্থবছরে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৪.৩৪ শতাংশ, যা আগের বছর ছিল ৩.৫১ শতাংশ।
এই প্রবণতা ইঙ্গিত দেয়, কৃষি ও সেবা খাতের দুর্বলতা সামগ্রিক জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে চাপে ফেলেছে, যা ভবিষ্যতের জন্যও এক ধরনের সতর্ক সংকেত।
💸 মাথাপিছু আয় বেড়েছে, স্বস্তি এখানেই
অর্থনীতির ধীরগতি সত্ত্বেও দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২১১ টাকা, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৩ লাখ ৪ হাজার ১০২ টাকা। মার্কিন ডলারে হিসাব করলে মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,৮২০ ডলার, আগের বছরের ২,৭৩৮ ডলারের তুলনায় এটি প্রায় ৩ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি।
এই বৃদ্ধি দেশের সামগ্রিক আয় প্রবাহে ইতিবাচক বার্তা দেয়। যদিও জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমেছে, তবে মাথাপিছু আয়ের এই বৃদ্ধিই প্রমাণ করে যে আয় বণ্টনে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে বা বৈদেশিক মুদ্রা আয়জনিত ইতিবাচক রূপান্তর ঘটেছে।
📊 বিনিয়োগ ও সঞ্চয়ে ধীরগতি
বিনিয়োগ ও সঞ্চয়ের দিক থেকে চিত্র ততটা আশাব্যঞ্জক নয়। বিবিএস’র তথ্যে দেখা যায়—
বিনিয়োগের হার কমে দাঁড়িয়েছে জিডিপির ২৯.৩৮ শতাংশে (গত বছর ছিল ৩০.৭০ শতাংশ)
দেশজ সঞ্চয় নেমে এসেছে ২৩.২৫ শতাংশে, যা আগের বছর ছিল ২৩.৯৬ শতাংশ
জাতীয় সঞ্চয় বেড়ে ২৯.০১ শতাংশ হয়েছে, যা আগের বছর ছিল ২৮.৪২ শতাংশ
এই তথ্যগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে মানুষের সঞ্চয় প্রবণতা ও বিনিয়োগ সক্ষমতা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে, যা ভবিষ্যতের প্রবৃদ্ধির জন্য বাধাস্বরূপ হতে পারে।
🔍 নীতিনির্ধারকদের জন্য বার্তা
জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়া এবং কৃষি ও সেবা খাতের দুর্বল পারফরম্যান্স সরকার ও নীতিনির্ধারকদের জন্য চিন্তার বিষয়। তবে মাথাপিছু আয়ের বৃদ্ধি কিছুটা আশার জায়গা তৈরি করেছে।
সংশ্লিষ্ট অর্থনীতিবিদদের মতে, ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধারের জন্য কৃষি ও সেবা খাতে প্রযুক্তি, দক্ষতা উন্নয়ন এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া জরুরি। পাশাপাশি দেশজ সঞ্চয় বাড়াতে হলে জনগণের আস্থা ও আয় বৃদ্ধি করতে হবে।
সারাংশে, বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি মিশ্র বার্তা দিচ্ছে—যেখানে প্রবৃদ্ধির হার নিম্নমুখী হলেও নাগরিকদের ব্যক্তিগত আয় বাড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে পরিকল্পিত ও টেকসই অর্থনৈতিক কৌশল গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
✍️ লেখক: [ প্রবন্ধ মিডিয়া ]
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)