এক সময় ছিল, যখন ‘বাঘ’ ডাকলেই কাদের সিদ্দিকীর নাম সামনে চলে আসত। টাঙ্গাইলের জনপদে গর্জে ওঠা সেই যোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সময় যিনি গড়ে তুলেছিলেন সাহসী গেরিলা বাহিনী—তিনি ছিলেন এক কিংবদন্তি। সাহস, নেতৃত্ব আর নিঃস্বার্থ আদর্শের প্রতীক ছিলেন তিনি।
কিন্তু প্রশ্ন এখন—সেই বাঘটা কোথায়? সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজনীতি বদলেছে, সমাজ বদলেছে, মানুষের চাহিদাও বদলেছে। কাদের সিদ্দিকী কি সেই পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পেরেছেন?
একাত্তরের গর্জন ছিল শত্রুর বুক কাপানোর মতো, আর আজকের রাজনীতিতে তাঁর উচ্চারণ অনেক সময় কেঁচোর ফিসফিসানির মতো শোনায়। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান কেউ অস্বীকার করে না, কিন্তু রাজনীতি তো একটা চলমান বাস্তবতা—যেখানে কেবল অতীত দিয়ে নয়, বর্তমান দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে হয়।
সমস্যাটা এখানেই। কাদের সিদ্দিকী যেন এখনও ভাবেন, বাংলাদেশ ১৯৭১ সালেই থেমে আছে। একসময় শেখ হাসিনার পাশে, পরে খালেদা জিয়ার ছায়ায়, আবার হঠাৎ একক সংগ্রামী—এই ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তন তাঁকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জন করেছিলেন নীতির কথা বলে, অথচ ২০১৮ সালে সেই ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিলেন, যেখানে যুদ্ধাপরাধীদের মদদদাতা দলও ছিল। এমন দ্বৈত অবস্থান শুধু রাজনীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে না, বরং তাঁর নিজের অতীত অবদানকেও ধূসর করে তোলে।
আজ তাঁর নিজের দল প্রায় বিলুপ্তপ্রায়, কিন্তু আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি নেই। মিডিয়ার লাইমলাইটে আসার চেষ্টা, হঠাৎ হুংকার, ফেসবুক লাইভ কিংবা সংবাদ সম্মেলনে চমক—সবই যেন নিজেকে মনে করিয়ে দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা। কিন্তু জনতার দৃষ্টি এখন আর অতীতের বীরত্বে আটকে নেই, তারা চায় প্রাসঙ্গিক নেতৃত্ব, বাস্তব সমাধান।
রাজনীতির এই মঞ্চে কাদের সিদ্দিকী যেন হয়ে উঠেছেন এক ট্র্যাজিক চরিত্র—যিনি একসময় ইতিহাস লিখেছেন, আর এখন সেই ইতিহাসের প্রতিধ্বনি শুনে বেঁচে আছেন। যিনি প্রতিবার চেষ্টা করেন ফিরে আসতে, নতুন নাটক সাজাতে, কিন্তু দর্শকের সারি ক্রমেই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।
শেষ কথা
কাদের সিদ্দিকী কি বাঘ? ইতিহাস বলবে, একসময় অবশ্যই ছিলেন। কিন্তু আজ? আজ তিনি এক অতীত গর্জনের স্মৃতিচিহ্ন—যার প্রতি আমাদের সম্মান আছে, কিন্তু যার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ নিয়ে মানুষের প্রত্যাশা অনেক কমে গেছে।